শেখ হাসিনার নতুন গ্রাফিতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা
নিজস্ব প্রতিবেদন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গ গ্রাফিতি মধ্যরাতে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। পরে বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা এসে বাধা দেয় এবং শিক্ষার্থীরা আবারো শেখ হাসিনার ব্যঙ্গ গ্রাফিতি আঁকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে উত্তপ্ত আলোচনা।
কেউ কেউ নতুন ও পুরাতন ছবি শেয়ার করে তাদের মতামত দিচ্ছেন।
নতুন গ্রাফিতির ছবিটি শেয়ার করে একজন লিখেছেন, ‘যাদের বুকে স্বৈরাচারের রূপ দেখতে কষ্ট লাগে, যারা জুলাইকে ঘৃণা করে, তারা সবকিছু মুছে দিতে চায় এভাবে।’
আরেকজন দুটি ছবিই শেয়ার করে লিখেছেন, “The struggle of “humans” against power is the struggle of memory against forgetting” (erasing). — Milan Kundera
একজন আর প্রোফাইল পিকচারে আগের গ্রাফিতির ছবি দিয়ে ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘আমি শুশিলমুখো ডাইনিটার এই ছবিটাই চাই! অন্য কোন ছবি চাই না!’
অন্যদিকে কেউ শেয়ার করেছেন, ‘সুশীল শয়তানির স্বরূপ..!’
আরেকজন লিখেছেন, ‘টিএসসিতে গেলেই ছবি দুইটার দিকে খুব আগ্রহ নিয়া তাকাইয়া থাকতাম। ভাবতাম আল্লাহ যেইভাবে ফেরাউনরে লোহিত সাগরে ডুবাইয়া মারার হাজার বছর পরেও মানবজাতির লইগা উদাহরণস্বরূপ অক্ষত রাইখা দিছে, হয়তো এই ছবি দুইটাও জালেমের সারা শরীরে মজলুমের খুন আর ঘৃণা নিয়া কালের স্বাক্ষীস্বরূপ অক্ষত দাঁড়াইয়া থাকবে।’
এদিকে শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মোছার চেষ্টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, রাত ২টার দিকে সিটি করপোরেশনের লোকজন শেখ হাসিনার ব্যঙ্গ গ্রাফিতি মুছতে যান। এ সময় তারা শেখ হাসিনার গ্রাফিতির মুখের অংশ মুছে ফেলেন। পরে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সেটি পুরোপুরি মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। এরপর শিক্ষার্থীরা পুনরায় সেখানে শেখ হাসিনার গ্রাফিতি এঁকে দেন।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ নামক এই গ্রাফিতিতে পুনরায় শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গ্রাফিতি আঁকার কাজটি করেন ছাত্র ইউনিয়নের চারুকলা অনুষদ শাখার সদস্য মৃধা রাইয়ান ও ঋষি। তাদের সঙ্গে ছিলেন রাইয়ান ফেরদৌস ও সর্দার নাদিম মাহমুদ শুভ।
ছাত্র ইউনিয়ন আরো জানায়, এনএসআই থেকে ফোন পেয়ে তারা অবগত হন যে, ছবিটি “দৃষ্টিকটু” মনে হওয়ায় সিটি কর্পোরেশন সেটি মুছে ফেলার উদ্যোগ নেয়। তবে রাত আনুমানিক ২টার দিকে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা যখন এটি মুছে ফেলতে আসে, তখন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়।
এর মধ্যেই শেখ হাসিনার মুখের অংশ মুছে ফেলা হয়।
ছবিটি মুছে ফেলার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন একটি প্রতিকৃতি নির্বাচন করে সেটি পুনরায় আঁকা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি পুরোপুরি ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পাসে যখন বিভিন্ন সংগঠন বা দল বা শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রোগ্রাম করে। সেগুলোর ছবি ও বিস্তারিত সংগ্রহ করে এনএসআই উদ্বর্তন পর্যায়ে পাঠায়। সেখানে এই ছবি গুলোর মধ্যে দেখা যায় যে ঢাবিতে এখনও শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়ে গিয়েছে। কিন্তু এগুলো যে প্রতিবাদের স্মৃতি হিসেবে এখানে রয়েছে এটা বোঝা যায় নি। সেজন্য এগুলো মুছতে বলা হয়েছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখানে যেভাবে চাইবেই সেভাবেই গ্রাফিতি থাকবে। আমরা অতি দ্রুত এই দুটি মেট্রোর পিলারকে ফ্যাসিবাদ ঘৃণা স্তম্ভ ঘোষণা করে দেব।’
সূত্র – কালের কন্ঠ
Leave a Reply